আজ ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রতারক স্কুল শিক্ষীকা

আটুয়া থেকে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক স্কুল শিক্ষীকা, আটক

সোহেল রানা, পাবনা প্রতিনিধি:

হালাল উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারন মানুষদের কাছে থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পাবনার স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে।

এই ঘটনায় প্রতারণার স্বীকার হওয়া ভুক্তভোগীরা ওই নারীর বাড়ি আজ ১৫সেপ্টেম্বর অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরবর্তীতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে স্থানীয় থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

প্রতারনার স্বাীকার ভুক্তভোগীরা জানান, পাবনা পৌর এলাকার পুলিশ লাইনস স্কুল এন্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার শিক্ষিকা মোছাঃ সীমা আক্তার (৪০)। তিনি পৌর এলাকার আটুয়া হাউজ পাড়া মহল্লার মৃত হানিফুল ইসলামের স্ত্রী। এই শিক্ষিকা সাধারণ মানুষদের ইসলামী শরিয়া মোতাবেক গরুর খামার ও আরো নানা ধরনের হালাল উপর্জনের কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তিনি শুধু সাধারন মানুষই নয় বোকা বানানিয়েছেন নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাধিক শিক্ষক, পুলিশ সদস্যদেরও। মানুষ তার কথায় বিশ্বাস করে লাভের আশায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অর্থ বিনিয়োগ করে। লাভের অংক বেশি হওয়ায় লোভে পরে অনেকেই সেখানে অর্থ বিনিয়োগে করতে আগ্রহী হয়।

প্রথম পর্যায়ে বিনিয়োগ কারীদের আকৃষ্ঠ করতে তাদেরকে লাভের অর্থ প্রদান করেন। কিন্তু পরবর্তীতে টাকার অংক বেড়ে গেলে তিনি সমস্ত টাকা আত্মসাত করে গা ঢাকা দেন। এদিকে মাসিক লাভের অর্থ নিতে এসে ওই নারী ব্যবসায়ীকে না পেয়ে তখন সকলেই বুঝতে পারে তারা চরম প্রতারনার স্বীকার হয়েছেন। এদিকে ওই প্রতারকের কাছে অর্থদিয়ে অনেকেই এখন সর্বশান্ত হয়ে পরেছেন বলে জানান।

এই ঘটনার পরে স্কুল কতৃপক্ষ ওই নারী প্রতারককে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ। ঘটনার পরে ভুক্তভোগীরা পাবনা সদর থানাতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই প্রতারক নারী শিক্ষিকা অনেকের কাছ থেকে চেক ও স্ট্যাম্পের মাধ্যমেও অর্থ নিয়েছেন।

তবে ঘটনা স্থলে গিয়ে ওই প্রতারক নারী ব্যবসায়ীর বৈধ কোন কাগজ পত্র পাওয়া যায়নি। তিনি স্বীকার করেছেন মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার বিষয়টি। তিনি এক জনের কাছে থেকে অর্থ নিয়ে আরেক জনকে দিয়েছে বলে স্বীকার করেন।

এই ঘটনায় ভুক্কভোগী প্রতারনার স্বীকার হওয়া সাধারন মানুষ তাদের অর্থ ফিরে পাবার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে প্রতারক মোছাঃ সীমা আক্তার বলেন, ‘আমার কোন বৈধ ব্যবসা নাই। এক জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আরেক জনকে দিয়েছি। যারা টাকা দিয়েছে তাদেরকে সুদে অনেক টাকা লাভ দিয়েছি। অমি কারো টাকা আত্মসাত করিনি। মানুষ না জেনে না বুঝে আমাকে টাকা কেন দিয়েছে। তাদেরকে প্রশ্ন করুন। সম্প্রতি যারা আমাকে টাকা দিয়েছে তাদের টাকার একটি হিসাব করেছি। সেখানে প্রায় তিন কোটি টাকার মত হবে। সেই সকল টাকা আমি দিয়ে দিবো। আর যারা সুদে লাভের টাকা নিয়েছে তাদেরটা দিবোনা। আর আমাকে কেন স্কুল থেকে বহিস্কার করেছে সেটি স্কুল কর্তৃপক্ষ জানে। আমি ব্যক্তিগত কাজে বাইরে ছিলাম। জেলা পুলিশ আমাকে আসতে বলেছে বলে আমি এসেছি’।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধা আখতার বলেন, এই ঘটনার বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। তার বিরুদ্ধে এই ধরনরে অভিযোগের কারনে তাকে স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার প্রতারণার বিষয়ে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ নিয়ে এসেছিলো ভুক্তভোগীরা। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি। অনেকেই তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রমান নিয়ে এসেছেন। ভুক্তভোগীরা তার বাড়িতে তাকে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রেখেছিলো। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে থানাতে নিয়ে আসা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের আলোকে মামলা দায়ের করা হবে।

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap